ডট বলের চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ যেখানে
নির্বিঘ্নেই সেদিন নিজের প্রথম ওভারটি করেছিলেন হাসান মাহমুদ। চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক তাঁকে আক্রমণে আনেন একাদশ ওভারে। মাত্র ৪ রান খরচ করা এই পেস বোলারকে অবশ্য বেশ ব্যয়বহুল দেখায় তাঁর দ্বিতীয় ওভারের পর। শেষ দুই বলে তাঁকে ছক্কা হাঁকান ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার, ওভার থেকে আসে ১৭ রান। প্রথম দুই ওভারেই তাই ব্যয় হয়ে যায় ২১ রান।
তবে ওই ম্যাচটি যেমন বোলিংয়ে বাংলাদেশের ফিরে আসার গল্প, তেমনি তরুণ এই বোলারেরও। ১৭তম ওভারে যখন আবার আক্রমণে ফেরেন, তখনো স্ট্রাইকে সেই বাটলারই। কিন্তু নিজের শেষ দুই ডেলিভারিতে ছক্কা খাওয়া হাসান ভড়কে না গিয়ে রান আটকানোর কথাই নাকি ভাবছিলেন, ‘ও যে আমাকে টানা দুটো ছক্কা মেরেছে, আমি ওই ছয়ের দিকে তাকাইনি। আমি দেখিইনি যে ও কী করছে। আমি কী করব, ভাবছিলাম শুধু তা নিয়েই। যেকোনোভাবেই হোক, শেষ দুই ওভারে রান কম দিতে হবে, এটিই ছিল আমার চ্যালেঞ্জ।’
সেই চ্যালেঞ্জে কী দারুণভাবেই না উতরে যান হাসান! আক্রমণে ফিরে প্রথম বলেই ফেরান বাটলারকে। নিজের তৃতীয় ওভারে খরচও করেন মাত্র ১ রান। শেষ ওভারে ৪ রান দিয়ে তুলে নেন স্যাম কারানকেও। ডেথ ওভারে তাঁর ৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেওয়াটা ইংল্যান্ডের রানপ্রবাহও আটকায়। সফরকারীরা শেষ ৫ ওভারে ৩০ রানের বেশি তুলতেও পারেনি। টি-টোয়েন্টিতে এ রকম বোলিংয়ের চাহিদাই তো তুঙ্গে থাকে। চাহিদানুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করার চেষ্টা থাকে হাসানেরও, ‘টি-টোয়েন্টির ৪ ওভার খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যায়। ওই সময় ব্যাটার শুরু থেকেই মারতে চায়। আমরাও শুরু থেকে কম রান দেওয়ার চিন্তা করি। যে ধরনের বলে ডট পাওয়া যায়, ওইটাই বেশি চেষ্টা করি।’
ইয়র্কার আর স্লোয়ার মিলিয়ে বৈচিত্র্যময় বোলিংয়ে রান আটকান হাসান। যথাসম্ভব ডট বলে ইংল্যান্ডের স্কোর সাধ্যের মধ্যে রাখার চেষ্টায় অবদান রাখেন অন্য বোলাররাও। সবাই মিলে করেন ৩৮টি ডট বল। সবচেয়ে বেশি ৯টি করে ডট বল করেন হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান। অবশ্য গত এশিয়া কাপ থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশের কুড়ি-বিশের ক্রিকেট দুর্যোগেও বোলাররা ডট বল দেওয়ার ক্ষেত্রে ভীষণ ধারাবাহিক ছিলেন। এই সিরিজ শুরুর আগে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে খেলা ১৩ ম্যাচের মধ্যে সবচেয়ে কম ৩৪টি ডট বল করার ঘটনা এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
আর সবচেয়ে বেশি ৫৭টি বিশ্বকাপের নেদারল্যান্ডস ম্যাচে। ডাচদের বিপক্ষে ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় হওয়া বিশ্ব আসরে তাদের আরেকটি জয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। যে ম্যাচে বোলাররা ডট বল করেছেন ৫০টি। আর শক্ত প্রতিপক্ষ বিবেচ্য হলে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৪৪টি ডট বল করার ঘটনা পাকিস্তানের বিপক্ষে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৪২টি করে। সেই হিসাবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টির বোলিং প্রশংসনীয়ই। যদিও বোলারদের জন্য বেশি ডট বল দেওয়াটা কৃতিত্বের হলে ব্যাটারদের ক্ষেত্রে তা নিন্দারই।
ব্যাটারদের বাড়তি ডট বল খেলা নিয়ে উদ্বেগ কমার ইঙ্গিত ছিল চট্টগ্রামে ইংলিশদের হারানোর ম্যাচেও। ৩৬টি ডট বল খেলেছেন তাঁরা। এটিকেও উন্নতি বলে ধরতে হয়, যখন শুনবেন এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের মাঝখানে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দুই টি-টোয়েন্টির সিরিজের এক ম্যাচে ব্যাটাররা ৫১টি ডট বলও খেলেছেন! এই সিরিজ শুরুর আগে খেলা সর্বশেষ ১৩ ম্যাচের মাত্র চারটিতেই কেবল ৪০-এর কম ডট বল খেলার ঘটনা আছে। এর মধ্যে দুটো ম্যাচ আবার আমিরাত ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বাকি দুটোতে প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড (ত্রিদেশীয় সিরিজে ৩৯) ও ভারত (বিশ্বকাপ ম্যাচে ৩৪)। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৫৫টি ডট বল খেলা দল যদি ইংল্যান্ডকে হারিয়ে এই সংস্করণে নতুনভাবে শুরু করে থাকে, তাহলে প্রথম ম্যাচে ব্যাটারদের খেলা ৩৬ ডট বল উন্নতির সূচকই!